BREAKING NEWS

বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

আজ মসজিদে মসজিদে ইসলাম প্রিয় জনতার বিক্ষোভ মিছিল


স্টাফ রিপোর্টার : শাহবাগের ব্লগার রাজিবসহ বিভিন্ন ব্লগার ও নাস্তিক কর্তৃক রাসূল (সা.) এবং ইসলামের এবাদত বন্দেগী নিয়ে জঘন্য অবমাননার প্রতিবাদে দেশের ইসলাম প্রিয় জনতার ক্ষোভ এখন গণবিক্ষোভে রূপ নিয়েছে। এ ক্ষোভের ধারাবাহিকতায় আজ শুক্রবার বাদ জুমা সারাদেশের মসজিদসমূহ থেকে গণবিক্ষোভ মিছিল বের হবে। বিভিন্ন ইসলামী দল, সংগঠন এবং সাধারণ মুসুল্লীরা বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেবে। গতকাল বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথকভাবে আজকের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি সফল করার জন্য ইসলাম প্রিয় জনতার প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
এদিকে রাসূল (সা.) ও এবাদত বন্দেগী নিয়ে জঘন্য কটাক্ষের প্রতিবাদ করে আলেম উলামা, পীর মাশায়েখসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গতকালও পৃথক পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন।
 
ইসলামী আন্দোলন
আজ শুক্রবার জুমার নামাযের খুৎবা পূর্ব বয়ানে নাস্তিক-মুরতাদ, নবীর দুশমন ও ব্লগারদের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক বক্তব্য দিতে দেশের সকল মসজিদের সম্মানিত ইমাম-খতীবদের প্রতি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাইর আহবান জানিয়েছেন।  এক বিবৃতিতে পীর ছাহেব চরমোনাই বলেন, নাস্তিক-মুরতাদ গোষ্ঠী নতুন স্টাইলে প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে।  তিনি এব্যাপারে জুমার খুৎবায় দেশের সম্মানিত ইমামদেরকে অত্যন্ত মহব্বত নিয়ে বক্তব্য দেয়ার আহবান জানান।
পীর ছাহেব চরমোনাই বলেন, সরকার নাস্তিক মুরতাদদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে আজীবনের জন্য প্রত্যাখান করবে দেশবাসী। পীর ছাহেব আজ বাদ জুমা  রাজধানী ঢাকায় বাদ জুমা সমাবেশ ও মিছিল সফল করার আহবান জানান।
 
ইসলামী ঐক্যজোট
গতকাল লালবাগস্থ ইসলামী ঐক্যজোট কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামগণের এক মতবিনিমিয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশের বিরাজমান ইসলাম বিরোধী অপতৎপরতা এবং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। উলামায়ে কেরামগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জব্বার, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী , মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ, মাওলানা আবুল ফাতাহ, মাওলানা মাহফুজুল্লাহ, হাফেজ আবুল হাসানত, মুফতী মুহাম্মদ তৈয়্যব ও মাওলানা আবুল কাশেম। সভায় নেতৃবৃন্দ আজকের বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করার আহবান জানান। 
হেফাজতে ইসলাম কেরাণীগঞ্জ শাখা
নাস্তিক মুরতাদ ব্লগারচক্রের ফাঁসি এবং ইসলাম ও রাসূল (সা.) সম্পর্কে জঘন্য কটুক্তিকারীদের কঠোর শাস্তির লক্ষ্যে ব্লাসফেমী আইন প্রণয়নের দাবাীতে গতকাল হেফাজতে ইসলাম কেরাণীগঞ্জ থানা শাখার উদ্যোগে শতাধিক মাদ্রাসা-মসজিদের ইমাম খতীব ও ওলামাদের নিয়ে শাক্তা মাদ্রাসায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের মধুপুর পীর ছাহেব মাওলানা আব্দুল হামিদ-এর সভাপতিত্বে এ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকার মোহাম্মদপুর জামিয়া রহমানীয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আব্দুল মজিদ, মুফতী জাহিদুল ইসলাম, মাওলানা ফয়জুল্লাহ খান, হাফেজ মাওলানা জহিরুল ইসলাম, ও মাওলানা বিল্লাল হোসাইন। সমাবেশে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে নেতৃবৃন্দ বলেনরাসূল (সা.)কে অবমাননাকারী নাস্তিক ব্লগারচক্রকে অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। নেতৃবৃন্দ আজ বাদ জুমা কেরাণীগঞ্জ কদমতলী চৌরাস্ত চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করার আহবান জানান।
আমরা ঢাকাবাসী
নাস্তিক ব্লগারচক্রের ফাঁসি এবং ধর্মভিত্তিক ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্রে র প্রতিবাদে বাদ মাগরিব উর্দ্দু রোডস্থ আমরা ঢাকাবাসীর কার্যালয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি আলহাজ শামসুল হকের সভাপতিত্বে এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাজী সাবের হোসেন, মহাসচিব আলহাজ জামাল নাসের চৌধুরী, মাওলানা আব্দুল আলী, ওসমান গনি, জামাল উদ্দ্নি ও সাগর। নেতৃবৃন্দ কটুক্তিকারী ব্লগারদের অবিলম্বে ফাঁসি কার্যকর এবং ব্লাশফেমী আইন প্রণয়নের জোর দাবী জানানো হয়।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইটে আজকের বিক্ষোভ সমাবশ কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে সফল করার আহবান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর ছাহেব চরমোনাই, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান ও মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ূন কবীর, তাহফিজে হারামাইন পরিষদের সভাপতি মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকী, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, আমরা ঢাকাবাসীর সভাপতি আলহাজ শামসুল হক।
আজকের কর্মসূচী
*
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে নব্য নাস্তিক-মুরতাদদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ শুক্রবার বাদ জুমা পুরানা পল্টন হাউজ বিল্ডিং চত্বরে  সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। সভাপতিত্ব করবেন নগর সভাপতি অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন।
*
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস-এর উদ্যোগে কুখ্যাত ব্লগার রাজিব কর্তৃক নবীজি (সা.) ও ইসলামকে কটুক্তির প্রতিবাদে আজ বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইট থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ বের করা হবে। ব¬গে রাসুল (স)-এর বিরুদ্ধে অবমাননাকারী নাস্তিক-মুরতাদদের শাস্তি ও ইসলামী রাজনীতি বন্ধের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ইসলামী ঐক্য আন্দোলন ঢাকা মহানগরীর উদ্যেগে আজ শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইট থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করবে।  মিছিলে উপস্থিত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক ডা.এস এম সাখাওয়াত হুসাইন ।
*
ইসলামী ঐক্যজোট ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে। এতে ঐক্যজোটের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।  হেফাজতে ইসলাম কেরাণীগঞ্জ থানা শাখার উদ্যোগে নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবী ও ইসলামী রাজনীতি বন্ধের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আজ বাদ জুমা কেরাণীগঞ্জের কদমতলা চৌরাস্তায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন মধুপুর পীর ছাহেব মাওলানা আব্দুল হামিদ। মহানবী (সা.) বাদ জুমা মালিবাগ বায়তুল আজিম শহীদি মসজিদ থেকে তাহফিজে হারামাইন পরিষদের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে। ইসলামী দল সমূহের উদ্যোগে আজ বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের উদ্যোগে আগামী কাল শনিবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর, জামাত শিবির নিষিদ্ধ করা, নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তি মৃত্যুদ- আইন পাশের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হবে।

ধর্ম ও আদালতের অবমাননা করছে ব্লগারচক্র

ধর্ম ও আদালতের অবমাননা করছে ব্লগারচক্র  
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে ব্লগে মহান আল্লাহ, মহানবী হজরত (সা.), পবিত্র কোরআন, ইসলাম ধর্ম ও ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধানের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, কুরুচিপূর্ণ বিষোদ্গারমূলক প্রপাগান্ডা চালায় নাস্তিক ও প্রতিক্রিয়াশীল ব্লগাররা। সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় চার বছর আগে থেকেই পবিত্র ধর্ম ইসলাম ও নবী-রাসুলদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মনগড়া প্রপাগান্ডা চালাতে শুরু করে তারা। গত বছর ২১ মার্চ হাইকোর্ট ইসলামবিদ্বেষী এসব ব্লগ বন্ধসহ ধর্মদ্রোহী নাস্তিক এসব ব্লগারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলেও তাতে পাত্তাই দিচ্ছে না তারা; বরং উচ্চ আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শাহবাগের কথিত প্রজন্ম চত্বরের নেতৃত্বদানকারী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন লিখেছে, ‘সম্পূর্ণ সজ্ঞানে সচেতনভাবে ঐ যুক্তিহীন অন্ধ ষাঁড়ের মতো উত্কট দুর্গন্ধময় ধর্মীয় অনুভূতি এবং ঐ যুক্তিহীন ধর্মীয় অনুভূতির রক্ষক আদালত, দুই জিনিসেরই অবমাননা করলাম।হাইকোর্টকে কটূক্তি করে আসিফ আরও লিখেছে যে, ‘তোমাদের যুক্তিহীন হাস্যকর অনুভূতি এবং তা রক্ষণাবেক্ষণের দায় আমার নয়, অযৌক্তিক সমস্ত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা, তা যাচাই করা, প্রয়োজনে ছুড়ে ফেলা আমার বাকস্বাধীনতা এবং আমার অধিকার। কোন সভ্য আদালত আমার এই অধিকার কেড়ে নিতে পারে না।
শুধু আদালত অবমাননাই নয়, পবিত্র ধর্মগ্রন্থও উচ্ছেদের ডাক দেয় শাহবাগের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ব্লগারচক্র।
পবিত্র ইসলাম, দেশের প্রচলিত আইন- আদালত এবং সভ্যতার শত্রু ব্লগারদের এসব কুিসত মন্তব্য ও বক্তব্যের ডাউনলোড করা কপি সম্পূরক নথি হিসেবে আদালতে পেশ করেন আইনজীবীরা। একই সঙ্গে তারা আদালতের আদেশসহ তা বিটিআরসি, র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পেশ করেন।
মহান আল্লাহ এবং নবী-রাসুলদের বিরুদ্ধে কুত্সা রটনা ও আদালত অবমাননাকারী এসব ব্লগারকে চিহ্নিত করে র্যাব ও ডিবি পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রতিবেদন জমা দিলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। সুপ্রিমকোর্ট, বিটিআরসি ও গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে যে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ব্লগাররা ইন্টারনেট ব্যবহার করে ব্লগ ও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহান আল্লাহ, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-সহ নবী-রাসুল (আ.), ইসলামের প্রধান খলিফা, ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধানকে কটাক্ষ করে মনগড়া ও ভয়ঙ্কর ধরনের মন্তব্য লিখে নিজেদের বিকৃত রুচি প্রকাশ করতে থাকে। ২০১১ সাল থেকে এসব ব্লগার আরও অশ্লীল ও অশালীন ভাষায় মহানবীর (সা.) বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে থাকে। এরই একপর্যায়ে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করলে সরকারের উপরের নির্দেশে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় বলে জানান ওই গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা। গোয়েন্দা হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আসিফ মহিউদ্দীন, ব্লগার আহমেদ হায়দার রাজীব শোভন ওরফে থাবা বাবা, আরিফুর রহমান (প্রকৃত নাম নিতাই ভট্টাচার্য), ইবরাহিম খলীল ওরফে সবাক, স্বপ্নকথক, অমি রহমান পিয়ালসহ বর্তমানে শাহবাগ আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী অন্য ব্লগাররা পবিত্র ইসলামের বিরুদ্ধে কুত্সা রটানোর মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। তারা সামহোয়্যারইন ব্লগ, মুক্তমনা ব্লগ, আমার ব্লগ, ধর্মকারীসহ (সম্প্রতি সরকার এটি বন্ধ করে দিয়েছে) বিভিন্ন ব্লগে এরা বিকৃত ভাষা প্রয়োগ করে মহান আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে নিয়ে ভয়ঙ্কর মন্তব্য করতে থাকে।
উচ্চ আদালতে রিট : এসব ব্লগ বন্ধ ও চিহ্নিত ব্লগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রার্থনা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বাতুল সরওয়ার ও ঢাকা সেন্ট্রাল লকলেজের অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম হাইকোর্টে একটি রিট (নং ৮৮৬/১২) করেন। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্য সচিব, ইনস্পেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, র্যাবের ডিজি, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) বিবাদী করা হয়। মহান আল্লাহ, নবী (সা.) ও ইসলামের বিধিবিধানের অবমাননা রোধে এ রিটটি গ্রহণ করে রুল জারিসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের আবেদন করে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ফাতিমা আনোয়ারসহ সুপ্রিমকোর্টের বিশিষ্ট কয়েকজন আইনজীবী। অপরদিকে রিট আবেদনটি খারিজ করে দেয়ার পক্ষে শুনানি করেন সরকার নিযুক্ত আইনজীবীরা।
বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মো. খোরশিদ আলম সরকার এ রিটের ওপর শুনানির পর গত বছর ২১ মার্চ রিট আবেদনটি গ্রহণ করে মহান আল্লাহ, রাসুল (সা.)-সহ ইসলাম ধর্মের অবমাননাকারী ব্লগুগুলো স্থাীয়ভাবে বন্ধের বিষয়ে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না মর্মে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। পাশাপাশি আদালত ওইসব ব্লগ ও ব্লগারদের বিষয়ে অনুসন্ধান করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিটিআরসি, র্যাব ও পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতি নির্দেশনা দেন এবং রুল নিষ্পিত্তি না হওয়া পর্যন্ত পিটিশনে উল্লেখ করা ওয়েবসাইট ও ব্লগগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
একই সঙ্গে আদালতের আদেশে ওইসব ওয়েবসাইট, ব্লগ ও ওয়েবপেজের স্বত্বাধিকারী এবং ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের অনুসন্ধান করে তাদের নাম-ঠিকানাসহ পূর্ণ পরিচয় আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেয়া হয়। আদালতের এ নির্দেশের পর বিটিআরসি প্রয়োজনীয় ব্লগারদের চিহ্নিত করে আদালতে পেশ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেয়। কিন্তু সরকারপক্ষ অদ্যাবধি এদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা, উল্টো এসব নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহী ব্লগারকে সমর্থন জানিয়ে আসছে।
আদালতের আদেশকে ব্লগারদের বৃদ্ধাঙ্গুলি : গত বছর ২১ মার্চ আদালত ইসলাম র্ধম ও নবী-রাসুল (আ.)-এর বিরুদ্ধে মারাত্মক ধরনের কুত্সা রটনাকারী ব্লগ বন্ধ ও ব্লগারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। ওইদনই রাত ১১টা ১৪ মিনিটে সামহোয়্যারইন ব্লগে আল্লাহ-ভগবান-ঈশ্বরের ব্যর্থতায় এবারে ধর্মীয় অনুভূতি রক্ষায় এগিয়ে এলো আদালত!শিরোনামে ধর্ম ও রাষ্ট্রদ্রোহী আসিফের দেয়া স্ট্যাটাসে লেখা হয়েছে, ‘একজন মুক্তমনার ধর্ম যদি হয় মানবতাবাদ এবং সে যদি দাবি করে কোরআন হাদিস বাইবেল গীতা রামায়ণ মহাভারত তোরাসহ এর মানবতাবিরোধী নারী অবমাননাকারী বিধর্মী নিধনের উসকানিমূলক আয়াতসমূহ তার মানবিক ধর্মানুভূতিকে আঘাত করছে, তার দায় আদালত নেবে কেন? সম্পূর্ণ সজ্ঞানে সচেতনভাবে ঐ যুক্তিহীন অন্ধ ষাঁড়ের মতো উত্কট দুর্গন্ধময় ধর্মীয় অনুভূতি এবং ঐ যুক্তিহীন ধর্মীয় অনুভূতির রক্ষক আদালত, দুই জিনিসেরই অবমাননা করলাম।হাইকোর্টকে কটূক্তি করে আসিফ আরও লিখেছে যে, ‘তোমাদের যুক্তিহীন হাস্যকর অনুভূতি এবং তা রক্ষণাবেক্ষণের দায় আমার নয়, অযৌক্তিক সমস্ত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা, তা যাচাই করা, প্রয়োজনে ছুড়ে ফেলা আমার বাকস্বাধীনতা এবং আমার অধিকার। কোন সভ্য আদালত আমার এই অধিকার কেড়ে নিতে পারে না।
ধর্মগ্রন্থ উচ্ছেদের ডাক : ওই একই স্ট্যাটাসে আসিফ ধর্মগ্রন্থ উচ্ছেদের ডাক দিয়ে লিখেছে যে, ‘মানুষের ধর্মবিশ্বাস যেমন যুক্তিহীন, তেমনি ধর্মানুভূতিও মোটাদাগে যুক্তিহীন। কখন কোথায় কিভাবে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি আহত হবে, বলা মুশকিল।আসিফ আরও লিখেছে, ‘মোল্লারা যখন দাড়ি-টুপি লাগিয়ে বালক ধর্ষণ করে, কাজের মেয়ে ধর্ষণ করে, অসংখ্য বিয়ে করে, কারোর ধর্মানুভূতি একটুও আহত হয় না। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মূল উত্স ধর্মগ্রন্থ এবং পয়গম্বরদের জীবনী। কোন সুস্থ বিবেকবান মানুষ এই রকম ঘটনা নিরপেক্ষভাবে পাঠ করলেই তাদের মনে নানান প্রশ্ন জাগবে। এমনকি কোরআনে যে মানবতাবিরোধী আয়াতগুলো রয়েছে, নারী অবমাননাকর আয়াত রয়েছে, হাদিসে কীভাবে যুদ্ধবন্দী সহি উপায়ে ধর্ষণ করতে হবে তা বলা হয়েছে, কীভাবে কাফের নিধন করতে হবে তা বর্ণনা করা হয়েছে। সেসব বর্ণনা করলেও মুমিনদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে। তাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মূল কারণটা, অর্থাত্ সেসব ধর্মগ্রন্থ উচ্ছেদ করাটাই যৌক্তিক ছিল। না হলে এ যুক্তিহীন অন্ধ ষাঁড়ের মতো অনুভূতি বাড়তে বাড়তে আমাদের শিল্প সভ্যতা সংস্কৃতি সব কিছু গ্রাস করে নেবে।
মহানবী (সা.)-কে মহাউন্মাদ ও কোরআন-হাদিসকে রঙ্গ উল্লেখ করে প্রতিরোধের ডাক দেয় ব্লগার আসিফ : রিটের আরজিতে ব্লগার আসিফের করা কয়েকটি লিংক উল্লেখ করা হয়। এতে ধর্মাদ্রোহী আসিফ httt://www.facebook.com/pages-এ লিখেছে, ‘কুফরি-কিতাব-হযরত-মহাউন্মাদ ও কোরান-হাদিস-রঙ্গ’; httt://www.facebook.com/pages-এ লেখা হয়েছে, ‘ধার্মিকতা একটি মানসিক ব্যাধি, আসুন আমরা একে প্রতিরোধ করি।
পবিত্র ইসলামকে বর্বর ধর্ম (নাউজুবিল্লাহ) হিসেবে চিহ্নিত করে ব্লগার আসিফ ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর রাত ১২টা ৫৪ মিনিটে সামহোয়্যারইন ব্লগে দেয়া স্ট্যাটাসে শরিয়া আইন এক অদ্ভুত পবিত্র কালাকানুন এবং মানবতার মুণ্ডুপাত! (অপ্রাপ্ত বয়স্কদের প্রবেশ) শিরোনামে লিখেছেন, ‘বেহেশতের হুর গেলমানের লোভে চরম অমানবিক এই বব্বর আইনকেও সমর্থন দিতে তাদের বুক কাঁপবে না, তাদের বিবেক একটুও অপরাধ বোধে ভুগবে না। নির্দ্বিধায় বলে ফেলবে, মাথা তো আর কাটে নাই, শুধু লিঙ্গই তো কেটেছে। এর কারণ তাদের বিবেক এবং মগজ তাদের বর্বর ধর্মের কাছে বন্ধক রাখা।পৃথক প্যারায় লিখেছে, ‘শরীয়া আইনকে নিয়ে কথা বলতে গেলে বহু বক্তব্য দেয়া যেতে পারে। আগেও কয়েকটি পোস্টে বলেছি, সেই শুরু থেকে শরীয়া আইনের নোংরামী দেখিয়ে এসেছি। আমাদের দেশের অশিক্ষিত মাদ্রাসা পাস বা কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষিত আম মুসলমান জানে না শরীয়া আইন কি, এটা কেন বর্বর আইন। তারা শুধু ধর্মটুকু দেখে আল্লা নবী বোঝে, তারা কেউই ইসলাম বিশেষজ্ঞ নয়।
নথি তে অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে যে, ২০১০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মুক্তমনা ব্লগে আসিফ মহিউদ্দীন তার বন্ধুদের উদ্দেশে অবশেষে নাস্তিক আসিফ মহিউদ্দীন ইসলামের সুশীতল ছায়ায় ফিরিয়া আসিলেন। বলেন সুবহানাল্লাহ!শিরোনামে লিখেছে যে, ‘সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটাইয়া অবশেষে স্বঘোষিত নাস্তিক আসিফ মহিউদ্দীন ইসলাম ধর্ম কবুল করিলেন এবং পাক কুরআন ছুঁইয়া শপথ লইলেন যে তিনি আর দ্বীন এচলাম, নবী মুহাউম্মাদ মোস্তফা এবং আল্যা তালার আরশ ধরিয়া আর টানা হ্যাচড়া করিবেন না।২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি রাত ১টা ৫৭ মিনিটের সময় আসিফ মহিউদ্দীন সামহোয়্যারইন ব্লগে ঈশ্বরের রাজত্ব এবং ধর্মদর্শনে প্রধানতম বলি নারী, নারী এবং নারীশিরোনামে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতের অপব্যাখ্যা করে লিখেছে যে, ‘তোমাদের স্ত্রীরা হলো তাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর।
২০১১ সালের ২ আগস্ট সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে সামহোয়্যারইন ব্লগে পবিত্র রমজান মাসকে ব্যাঙ্গ করে আসিফ মহিউদ্দীন লিখেছে যে, ‘আসন্ন পবিত্র রমজানুল করিমে কিছু এক্সট্রা পুণ্য কামাইবার উদ্দেশ্যে কাফের মুরতাদ নাস্তিক ভাইদের প্রতি আকুল আহ্বান, আসেন এই পবিত্র মাসে আল্লার আরস ধইরা এমন কইরা টানাটানি করি যেন তিনি নিচে নাইম্যা আমাদের দুঃখ দুর্দশা দেইখা যাইতে বাধ্য হন। আমিন। জয় নাস্তিক্যবাদ। অবিশ্বাস দীর্ঘজীবী হোক। মুক্তিচিন্তার জয় হোক।
২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল রাত ১টা ১৪ মিনিটে সামহোয়্যারইন ব্লগে ইসলাম, গনিমতের মাল এবং আমাদের মানবতাশিরোনামে আসিফ মহিউদ্দীন লিখেছে যে, ‘গতকাল এবং গতপরশু সামহোয়্যারে বেশ কয়েকজনার সাথে তর্কের পর কয়েকটা বিষয়ে আমরা (ইসলাম পন্থী ও নাস্তিকরা) একমত হলাম যে, ইসলাম ধর্মের দাসীর সাথে ছহবত, যুদ্ধবন্দিনী হিসেবে প্রাপ্ত (গনিমতের মাল) নারী এবং শিশুদের দাস বানানো এবং সেই সকল নারীদের সাথে ইসলামী কায়দায় ছহবত করা জায়েজ আছে। এজন্য সেই নারীকে বিয়ে করার বা দেনমোহর দেবার প্রয়োজন পরবে না।
বিটিআরসি ও গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা : সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার পর পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে বিটিআরসি মহান আল্লাহ ও নবী-রাসুল (আ.) এবং ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধানের বিরুদ্ধে ভয়ানক কুত্সা রটনাকারী ব্লগার ও ব্লক এবং ফেসবুকসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাইট ও ঠিকানা চিহ্নিত করে আদালতে জমা দিয়েছে। সেই সঙ্গে সেসব ব্লগার যাতে ভবিষ্যতে আর ওই ধরনের অপকর্ম করতে না পারে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা আমার দেশ-কে জানান, ইসলামবিদ্বেষী সাইটগুলো বিটিআরসি বন্ধ করে দিলেও কিছুদিনের মধ্যেই রহস্যজনক কারণেই আবার সেগুলো খুলে দেয়া হয়। এতে ব্লগাররা আগের চেয়ে আরও বেশি করে এখন ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে চলেছে। আইনজীবীরা বলেন, আদালতের নির্দেশনা এখনও বহাল রয়েছে। এ অবস্থায় সেসব ব্লগে নতুন করে মন্তব্য বা বক্তব্য দেয়া ইসলামের অবমাননার পাশাপাশি আদালত অবমাননাও। এ ব্লগারদের ইসলামবিরোধী প্রচার-প্রপাগান্ডায় সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতারও অভিযোগ আনেন আইনজীবীরা।
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীরা আমার দেশ-কে জানান, ব্লগাররা উচ্চ আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করে মহান আল্লাহ, শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এবং অন্য নবী ও রাসুলদের (আ.) বিষয়ে কটূক্তি করে চলেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের ওপর আদালতের নির্দেশনা থাকলেও সরকার এ বিষয়ে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি; বরং চিহ্নিত এসব ব্লগার ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সভা-সমাবেশ করে চলেছে। বড়ই আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ধর্মদ্রোহী ও আদালত অবমাননাকারী এসব ব্লগার সরকারি দলের নেতা এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে বক্তব্য দিয়ে চলেছে।